Sunday, September 6, 2020

সরকারী বইগুলি শিক্ষার্থীদের কাছে থাকে তো?

স্বাধীনতার পর গঠিত বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন (কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন) প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করলে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার দায় রাষ্ট্রের পালন হেতু বিনামূল্যে বই বিতরণের সুপারিশ করেন। সেই সুপারিশ অনুসারে ৮০-এর দশক থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু হয় কিন্তু তা শতভাগ করা সম্ভব হয় নাই। বাংলাদেশ  সরকারের ২০০৯ সালের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুসারে ২০১০ সাল থেকে স্কুল মাদরাসা নির্বিশেষে শতভাগ শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের শুরুতেই নতুন বই  তুলে দেওয়া হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা একটা কঠিন কাজ। ২০১০ সালের পূর্বে শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদরাসায় বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিক পর্যায়কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বছরের শুরুতেই ধনী-গরীব, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থী নতুন বই পাওয়ার আনন্দ উপভোগ করে। বই বিতরণের দেশব্যাপি এই উৎসবকে বই উৎসব হিসেবে পালন করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আনন্দ দানের চেষ্টা করা হয়। এই মহাযজ্ঞের জন্য নিঃসন্দেহে পড়াশোনার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ধনী, গরীব, শহর, গ্রাম নির্বিশেষে স্কুলগামী বাচ্চার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝরে পড়ার সংখ্যাও অনেকাংশে কমে গেছে।

কিন্তু এর বিপরীতে আর একটা চিত্র আমাদের একেবারেই অদেখা থেকে গেছে। সেটা অনেকটা বীভৎসও বটে। সারা দেশের অসংখ্য স্কুলে বিনামুল্যে প্রদত্ত বইগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বছর শেষে ফেরত নেওয়া হয়। ছিনিয়ে নেওয়া বললেও ভুল হবে না। গ্রাম বা মফঃস্বলের স্কুলগুলোই এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে কখন কখন অভিযোগ উঠে পুরাতন বই ফেরত না দিলে নতুন বই দেওয়া হয় না। স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন নিয়ম বা আইনের মাধ্যমে বইগুল কেড়ে নেয় সেটা বোধগম্য নয়। বই ফেরত দেওয়া বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক কোন নির্দেশনাও নেই। একটা সময় পুরাতন আর নতুন বই মিলিয়ে নতুন বছরে বই দেওয়া হত অর্থাৎ চাহিদামত বই এর যোগান ছিল না, তখন হয়ত বই ফেরত নেওয়ার দরকার ছিল । কিন্তু বর্তমানে সেই প্রেক্ষাপট মোটেই নেই।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই বই গুলো কি করা হয়? সহজ ভাবে বলা যায় বই গুলো অকেজো কাগজ হিসেবে বিক্রি করা হয়। হাট-বাজারে বইয়ের পাতা দিয়ে তৈরি কাগজের ঠোঙার আধিক্য দেখে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের সুঘ্রাণ নিতে নিতে বই গুলির প্রতি যে ভালবাসার জন্ম দেয়, শিক্ষিত হয়ে ওরকম নতুন বই লেখার স্বপ্ন দেখে, রাজ্যের যত ভাল আর মহৎ বাসনা বুনে, বই কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে তা সমুলে উৎপাটন করা হয়। একটা স্কুলের সমস্ত পুরাতন বই যেগুলোতে সমস্ত শিক্ষার্থীদের সমস্ত পরিশ্রম, অধ্যয়ন, প্রচেষ্টা অঙ্কিত থাকে তা সর্বোচ্চ তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ একবারও ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করছে না একজন শিক্ষার্থীর সারা বছরের সমস্ত ভালবাসা ওই বই গুলো।

কখন কখন উপরের ক্লাসের অনেক ধারনা নিচের ক্লাসের বই থেকে নিতে হয়, বিশেষ করে গণিত, জ্যামিতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোলসহ অন্যান্য বিষয়। বইগুলো তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে জ্ঞান অর্জনের পথকে কি অবরুদ্ধ করা হয় না? একটা একটা করে স্বপ্ন বুনে রাখা বইগুলো কেড়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের যেমন শিক্ষা গ্রহনের পথকে কঠিন করা হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকার সঠিক ব্যবহারও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আমার আশঙ্কা এবারও বইগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের থেকে কেড়ে নিয়ে জানুয়ারিতে বপনকৃত স্বপ্নের চারা ডিসেম্বরে সমূলে উৎপাটন করা হবে। বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক তদারকি করার কথা থাকলেও কতটুকু করা হচ্ছে সেটা বোধগম্য নয়। আমি আশা করব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে, ছাত্রদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে সহায়তা করবেন।   

 

মোঃ মেনহাজুল আবেদীন

সহকারী অধ্যাপক

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিডাকঃ menhaz@ku.ac.bd


No comments:

Post a Comment

সময়ের মূল্য কতটা ?

  জীবনে সময়ের মূল্য নিয়ে রচনা পড়ে নাই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। সময়ের মূল্য নিয়ে সচেতনতা সেখান থেকেই শুরু। সময়ের সঠিক ব্যাবহার আমাদের উন্নতির ...