Wednesday, September 2, 2020

নারী শক্তির উদ্বোধন

স্রষ্টায় বিশ্বাসী হোক বা প্রকৃতিতে বিশ্বাসী হোক, এটা সবাই স্বীকার করে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অপার শক্তিতেই স্থিত। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টিতে দুই ধরণের শক্তি যুগপৎ ব্যবহৃত হয়েছে যার একটি নারী শক্তি (Energy) অপরটি পুরুষ শক্তি (Power বা Strength)।  নারী শক্তি ও পুরুষ শক্তি কে যথাক্রমে শক্তি ও ক্ষমতা বলা যেতে পারে। এই লেখায় উক্ত শক্তিদ্বয়ের পরিচয়দানের যৎসামান্য চেষ্টা করা যেতে পারে। নারী শক্তি উৎপন্ন হয় আপনা থেকেই আর পুরুষ শক্তি সেটা ব্যবহার করে মাত্র। অর্থাৎ নারী শক্তির ব্যবহারই পুরুষ শক্তি। নারীকে (Female) যেন নারী শক্তির (Energy) সাথে মিলিয়ে না ফেলি। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। যে পুঞ্জিভূত শক্তির বলে ব্রহ্মাণ্ডের প্রথম বিস্ফোরণ হয়েছিল সেটা নারী শক্তি আর বিস্ফোরিত হওয়াটা পুরুষ শক্তি। সমুদ্রের গর্জনটা পুরুষ শক্তি আর যে শক্তির বলে গর্জনটা হচ্ছে সেটা নারী শক্তি। সৃষ্টি করা নারী শক্তি এবং সৃষ্টিকে প্রকাশ করা পুরুষ শক্তি। আমরা পুরুষ শক্তিকে দেখতে পাই ফলাফল/কাজ (Work) রূপে। এভাবে সকল কাজের/ফলাফলের জন্যই নারী শক্তি ও পুরুষ শক্তি যুগপৎ ভাবে কাজ করে। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষার সাথে মিলিয়ে বলা যায় কাজকে সম্পন্ন করার প্রকৃতিটি পুরুষ শক্তি (Power বা Strength) আর যে শক্তির উপর ভিত্তি করে কাজটি হয় সেটা নারী শক্তি (Energy)। অথবা এভাবেও বলা যায় যান্ত্রিক শক্তি (Mechanical energy) হচ্ছে পুরুষ শক্তি আর যন্ত্র যে শক্তি ব্যবহার করে যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে অর্থাৎ জ্বালানী (Fuel) হচ্ছে নারী শক্তি । পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের মাঝেই উভয় প্রকার শক্তি বিদ্যমান।  জীবতাত্ত্বিক ভাবে নারীতে (Female) নারী শক্তির আধিক্য থাকে আর পুরুষে (Male) পুরুষ শক্তির আধিক্য থাকে। কাজের সংকল্প/প্রেরণা আসে নারী শক্তি থেকে আর কাজটি সম্পন্ন হয় পুরুষ শক্তির দ্বারা অর্থাৎ ক্ষমতা অর্থহীন যদি না শক্তির সঞ্চয় না থাকে বা শক্তির উৎপাদন না হয়। যে সমাজে যত বেশি নারী শক্তির উৎপাদন হবে সে সমাজ তত বেশি এগিয়ে যাবে। কিন্তু ভয়ঙ্কর ভাবে দেখতে পাচ্ছি নারী শক্তি ক্রমবর্ধমান  ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা পুরুষ শক্তি বা ক্ষমতাকেই যেন শুধু যত্ন নিচ্ছি। একটা গোষ্ঠীতে নারী শক্তির পরিমান কম হলে সমস্ত পুরুষ শক্তি সেটাই বণ্টন করে কাজ করবে। নিরবিচ্ছিন্ন নারী শক্তির প্রবাহ না থাকলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বা উন্নত কাজের সংখ্যা পৃথিবীতে কমে যাবে। তখন শুধুই অন্যান্য প্রাণীর মত জন্ম আর মৃত্যুতেই মানব সমাজকেও সন্তুষ্ট থাকতে হবে। পৃথিবীর পুরাতন ধর্ম ও সংস্কার গুলোতে নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে নারীকে (Female) স্বীকার করা হয়। সেজন্যই আমরা দেখতে পাই নারী প্রধান সমাজ ব্যাবস্থা বা নারী/দেবী মূর্তির পূজা। এমনকি পিতৃভূমি না বলে মাতৃভূমি বলার অন্যতম কারণও এই নারী শক্তি কে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা দেখান এবং তার উৎপাদনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা। আজকের পৃথিবী বা আগামীর পৃথিবী বিনির্মাণে যদি নারী শক্তির যত্ন না নেওয়া হয় তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় অশুভ কাজ। পুঁজিবাদী সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যাবস্থা নারী শক্তির সবচেয়ে বড় আধার নারীকে (Female) শক্তি উৎপাদনে বাঁধা প্রদান করে। নারী শক্তি উৎপাদনে পুরুষের (Male) যে কিঞ্চিৎ সামর্থ্য আছে সেটাও বিনষ্ট করে।  তাই নারীর ক্ষমতায়ন নয় নারীর শক্তিয়ানে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেকটি পরিবারেই এই শক্তির উদ্বোধনে কাজ করতে হবে।  

 

মোঃ মেনহাজুল আবেদীন

সহকারী অধ্যাপক,

পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

ও  

পিএইচডি গবেষক

হোক্কাইদো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।

বিডাকঃ menhaz@ku.ac.bd , menhaz70@gmail.com  



·       Email শব্দটা Electronic mail এসেছে, শুরুতে E-mail লেখা হতো। Electronic অর্থ বিদ্যুতিন-সংক্রান্ত বা বৈদ্যুতিন। এখানে Email কে বিডাক বলা হচ্ছে। আমার আগে কেউ ব্যাবহার করছে কিনা জানা নাই।  আমার ইচ্ছে এটা প্রচলিত হোক। 

2 comments:

  1. স্যার, জীবনের গুরুত্ব প্রকাশক, মাধ্যম কি তাহলো নারী শক্তির রুপ বিশেষ।।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ। আপনার যে শক্তির বলে বুঝতে পারেন আপনার গুরুত্ব কি সেটাই নারী শক্তি।

      Delete

সময়ের মূল্য কতটা ?

  জীবনে সময়ের মূল্য নিয়ে রচনা পড়ে নাই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। সময়ের মূল্য নিয়ে সচেতনতা সেখান থেকেই শুরু। সময়ের সঠিক ব্যাবহার আমাদের উন্নতির ...